ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করা ঢাবি অধ্যাপক বহাল তবিয়তে


আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত পরিচালক অধ্যাপক ড. আবছার কামালের অপসারণের দাবিতে বেশ কিছুদিন শিক্ষক ও  শিক্ষার্থীরা সরব রয়েছে। বিভিন্ন তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে নীল দলের মানববন্ধনে অংশ নেন আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবছার কামাল। নীল দলের এই সক্রিয় সদস্যকে গত বছর সেপ্টেম্বরে করা হয় ভারপ্রাপ্ত পরিচালক। 


নভেম্বর মাসে সাধারণ শিক্ষকরা তাকে অব্যাহতির জন্য আবেদন নিয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। স্বৈরাচারের সময়ে দাপট দেখানো আবছার কামালের দাপট এখন চলছে আরো বেশি। দল পাল্টিয়ে অনেককে সাদা দলের হিসেবে পরিচয় দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 


গত ৯ জানুয়ারি আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ইংরেজি ভাষা প্রোগ্রামের (ইসোল) অধ্যাপক ড. সাইদুর রহমানকে একাডেমিক কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনার দাবিতে ভিসির কার্যালয় ঘেরাও করেন শিক্ষার্থীরা। লিখিত অভিযোগে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রবিবারের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও সমাধানের পথে হাঁটেনি। 


আইএমএলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবছার কামালের যত কীর্তি

২০২৪ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি)  আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ও  পরিচালক সাঈদুর রহমানকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। এছাড়া সেদিনই আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আধুনিক ভাষা ইনিস্টিউটের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ আবছার কামালকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হল। 

 

ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়ার পর তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ আসতে শুরু করে।  তথ্যানুসন্ধানে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে মানববন্ধন, আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদেরকে কালপ্রিট আখ্যা দেওয়া, নিজের ডিপার্টমেন্টে ক্লাস না নিয়ে বিইউপিতে ক্লাস নেয়া, সাবেক পরিচালক ও নীল দলের অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্যকে রক্ষার মিশনসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। 


ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে মানববন্ধন

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে যখন ড. ইউনুসকে হয়রানি করা হচ্ছিল, তখন ড. ইউনুসেরই বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলায় ২০২৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর একটি মানববন্ধন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নীল দল। সেখানে অংশ নেন আধুনিক ভাষা ইন্সটিটিউটের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবছার কামাল। মানববন্ধনে তিনি তার বক্তব্যে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করেন। এতে তিনি ড. ইউনুসের শাস্তিও দাবি করেন।


আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের আন্দোলনরত সাধারণ শিক্ষার্থীরা ইউনিভার্সাল ভয়েসকে জানান, ‘এইরূপ মিথ্যাচার করা একজন শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত পরিচালকের দায়িত্বে বসানোর যৌক্তিকতা নিয়ে তারা সন্দিহান।’ 

 

যৌন হয়রানি করা শিক্ষার্থীকে রক্ষার চেষ্টা 

আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের একজন ছাত্রের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর লিখিত অভিযোগ দেয় তার সহপাঠীরা। অভিযুক্ত ছাত্র ক্লাস রুমে যৌন হয়রানি করার সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে বলে জানায় সেই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তদন্ত কমিটি গঠন করে তিন দিনের মধ্যে সেই অভিযোগ নিষ্পত্তির কথা থাকলেও এখনো তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। অভিযুক্ত ছাত্র পতিত সরকারের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের পদধারী সদস্য এবং ভারপ্রাপ্ত পরিচালককে বিভিন্ন অনিয়মের সহযোগিতা করায় অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।


আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদেরকে কালপ্রিট আখ্যা দেওয়া

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে যখন ছাত্রদের ওপরে পুলিশ ও সরকারের পেটোয়া বাহিনী ছাত্রদের ওপরে হামলে পড়ে, সেই সময়েও খোদ ছাত্রদের বিরুদ্ধেই মিথ্যাচারে সামিল হওয়ার অভিযোগ রয়েছে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আবছার কামালের বিরুদ্ধে। 

ডার্ক স্টোরিস অব স্টুডেন্ট পলিটিক্স পেইজে সম্প্রতি আবছার কামালের স্ক্রিনশট প্রকাশ হয়। যেখানে দেখা যায়, তিনি ছাত্রদেরকে 'কালপ্রিট' বলে আখ্যা দিয়ে, ছাত্ররা ফার্মগেট মেট্রো স্টেশনে আগুন দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। এর ফলে তাকে ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্বে বসানো চরমভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে থাকলেও প্রশাসনের কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। 


শিশির ভট্টাচার্য্যকে রক্ষার মিশন

বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীনদের হয়ে বিভিন্ন নিয়মবহির্ভূত সুবিধা নেয়া আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের ফরাসি ভাষা ও সংস্কৃতি প্রোগ্রামের অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য্য, যিনি গত বছর এক মাসের ছুটি নিয়ে বিদেশ যাওয়ার পর আর ফিরে আসেননি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম মেনে ছুটি বাড়ানোর আবেদনও করেননি। সম্প্রতি শিশির ভট্টাচার্য্যের বিরুদ্ধে ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের পর আবছার কামাল নিজে শিশির ভট্টাচার্য্যের জন্য ছুটির আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে। শিশির ভট্টাচার্য্য কোর্স শিক্ষক হয়ে কোনো ক্লাস না নেওয়ার অভিযোগের পাশাপাশি এখনো সব একাডেমিক কার্যক্রমের সাথে যুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে।


যুক্ত থাকুন ইউনিভার্সাল ভয়েসের ইউটিউব চ্যানেলফেইসবুক পেইজে

Post a Comment

Previous Post Next Post